বাংলাদেশ সম্পর্কে অজানা ও অবাক করা ১০ টি তথ্য
বাংলাদেশ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের যেমন রয়েছে সমৃদ্ধশালী ইতিহাস তেমনি রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য। নানান কারণে এই দেশটি পৃথিবীতে সম্মানসূচক অবস্থান লাভ করেছে। আজকে আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন ১০টি তথ্য আপনাদের জানাবো যেই বৈশিষ্ট্যগুলো পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই খুজে পাওয়া সম্ভব নয় এবং বৈশিষ্ট্যগুলো বাংলাদেশকে করে তুলেছে অনন্য একটি দেশ।
১. নদীমাতৃক বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই অবাক করার মত একটি তথ্য হল, এই দেশে ছোট-বড় প্রায় ৭০০ এর চেয়ে বেশি নদী রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ’ বলা হয়। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বড় ৩টি নদী- ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা এবং মেঘনা বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। এছাড়া পদ্মা, যমুনা, কর্ণফুলীসহ আরো অনেক নদী এই দেশে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এইসব নদীগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
২. কক্সবাজার
আমরা অনেকেই মনে করি যে, কক্সবাজার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। এই ধারণাটি একদিক থেকে যেমন ঠিক তেমনি আরেকদিক থেকে ভুল। কারণ আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত হল Praia do Cassino যা ব্রাজিলে অবস্থিত। আসলে কক্সবাজার হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত। নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত বলতে বোঝানো হয়, যে সমুদ্রসৈকতে একটানা বালুময় স্থান রয়েছে এবং সেই বালুময় স্থানগুলোর মাঝখানে কোন উর্বর জমি নেই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আয়তন নিরবচ্ছিন্নভাবে ১২০ কিলোমিটার। কক্সবাজার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে কক্সবাজারে প্রতিবছর লাখ-লাখ পর্যটক ভিড় জমান। এজন্য কক্সবাজারকে বলা হয় The longest unbroken sea-beach।
৩. সুন্দরবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হল সুন্দরবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। সুন্দরবনের আয়তন ১,৩৯,৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে ৬০% বাংলাদেশে এবং ৪০% ভারতে অবস্থিত। সুন্দরবনে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বাঘের একটি প্রজাতি যার নাম ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’। এই বাঘের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য সকল পর্যটকদের মুগ্ধতার অন্যতম কারণ। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৪. বঙ্গোপসাগর
দক্ষিণ এশিয়াতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের আয়তন ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। বাংলাদেশের সকল বড় নদ-নদী এই উপসাগরে এসে মিশেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া মহাদেশের একাধিক বড় নদী বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ আরো কিছু দেশ দ্বারা ঘিরে রয়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার, কুয়াকাটা এবং সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ এই উপসাগরের নিকটে অবস্থিত। উল্লেখ্য যে, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে বঙ্গোপসাগরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
৫. ভাষার জন্য দেশ
বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমৃদ্ধশালী ইতিহাস হল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলাদেশের লাখ-লাখ মানুষ আন্দোলন করেছিল। সারা বাংলাদেশ সেদিন বিক্ষোভে ফেটে পরেছিল। ভাষার জন্য এই আন্দোলনে বাংলাদেশের হাজার-হাজার মানুষ সেদিন শহিদ হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার এই বিরল উদাহরণ কেবল বাংলাদেশই তৈরি করেছে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর বাংলাদেশীদের মাতৃভাষার প্রতি ত্যাগ স্বীকার এর স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই বাংলা ভাষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ নামটি এসেছে। বাংলাদেশ অর্থ হল Country of Bengal বা বাংলার দেশ। পৃথিবীর অন্য কোন দেশের নামকরণের ক্ষেত্রে জাতীয় ভাষার প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় না। তাই নামকরণের দিক থেকেও বাংলাদেশ পৃথিবীর অনন্য এক দেশ। বর্তমানে বাংলা ভাষা বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার সিয়েরা লিওন দেশের অন্যতম একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
৬. পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম দিন। এই দিনটিকে বাংলা নববর্ষ বলেও ডাকা হয়। প্রতিবছর ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। মুঘল সম্রাট আকবর সর্বপ্রথম বাংলা সনের প্রবর্তন করেছিলেন। পহেলা বৈশাখের দিন সারা বাংলাদেশে মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর এইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। পহেলা বৈশাখ সকল বাঙালিদের জন্যই এক অনন্য উৎসব।
৭. ঢাকা
ঢাকা হল বাংলাদেশের রাজধানী। কিন্তু আপনি কি জানেন, রাজধানী ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে ঢাকা শহরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৬ লাখেরও বেশি রিকশা চলাচল করে। এজন্য ঢাকা শহরকে The city of rickshaw বা রিকশার শহর নামে ডাকা হয়। এছাড়া ঢাকা শহরের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল The city of mosques অর্থাৎ মসজিদের শহর।
৮. ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই মূলত ২ ধরনের ঋতু দেখতে পাওয়া যায়। আবার অনেক দেশে ৪টি ঋতু রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রয়েছে মোট ৬টি ঋতু। এগুলো হল- গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল এবং বসন্তকাল। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে এই ৬টি ঋতু রয়েছে। কিন্তু ভারতের সকল অঞ্চলে এই ৬টি ঋতু দেঝতে পাওয়া যায়না। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশের সকল অঞ্চলে এই ৬টি ঋতু দেখতে পাওয়া যায়।
৯. বাংলাদেশের পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটি দেখতে কিছুটা এরকম যে, একটি সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে একটি লাল রঙের বৃত্ত বিদ্যমান। কিন্তু এই পতাকার মানে কি? সহজ ভাষায় বললে পতাকায় বিদ্যমান সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি এবং এদেশের তারুণ্যের প্রতীক। আর পতাকায় বৃত্তের লাল রঙ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ হওয়া যোদ্ধাদের রক্তের প্রতীক। একইসাথে এই লাল রঙ বাংলাদেশের উদীয়মান সূর্যকে নির্দেশ করে। এই অর্থপূর্ণ পতাকা বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবের বিষয়।
১০. জাতীয় সংসদ ভবন
বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হল এদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। এই ভবনটির ডিজাইন করেছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান স্থপতি লুই আই কান। ১৯৬১ সালে এই ভবনটির কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৮২ সালে এই ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছিল। বাংলাদেশের সংসদ ভবনটি এর ভিন্ন ধারার ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এই ভবনের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে এই ভবনটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সংসদ ভবন হিসেবে পরিচিত।