জানা অজানা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

 

রহস্যময় অ্যান্টার্কটিকার অজানা ১০টি তথ্য

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ কোথায় অবস্থিত? পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এই মহাদেশটি পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ যেটি স্থায়ীভাবে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। তাই এই মহাদেশটিকে নিয়ে বিজ্ঞানিদের আগ্রহের কমতি নেই। প্রতিবছর পৃথিবীর নানান দেশের বিজ্ঞানীরা এই মহাদেশে পাড়ি জমান গবেষণার উদ্দেশ্যে। বিজ্ঞানিদের এমন সব গবেষণায় প্রায়ই উঠে এসেছে অনেক অদ্ভুত তথ্য এই মহাদেশটির ব্যাপারে।

১. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি

সাধারনত মরুভূমি শব্দটা শুনলে আমরা অসহ্য তাপমাত্রার বিশাল বালুময় জনমানবহীন একটি জায়গার কথা কল্পনা করি। কিন্তু আমাদের এই ধারনাটি সঠিক নয়। একটি মরুভূমি বিশাল বালুময় হতে পারে, আবার বিশাল বরফে ঘেরা জায়গাও হতে পারে। মূলত মরুভূমি হল এমন একটি অঞ্চল যেখানে প্রতি বছর ১০ ইঞ্চিরও কম বৃষ্টিপাত হয়। আয়তনের দিক থেকে অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি। এর আয়তন ১৪.২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। অ্যান্টার্কটিকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান গড়ে ১৬৬ মিলিমিটার।

২. একসময় একটি উষ্ণ জলবায়ুবিশিষ্ট মহাদেশ ছিল

অবিশ্বাস্য হলেও এটি সত্যি যে পৃথিবীর অন্য ছয়টি মহাদেশের মত অ্যান্টার্কটিকাও একসময় একটি সবুজ ও উষ্ণ জলবায়ুবিশিষ্ট মহাদেশ ছিল। বিজ্ঞানিদের ধারণা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে অ্যান্টার্কটিকাতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ছিল। এমনকি অ্যান্টার্কটিকায় ডাইনাসরদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একসময়ের এই উষ্ণ জলবায়ুবিশিষ্ট মহাদেশটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল মহাদেশে পরিণত হয়েছে।

৩. কোন অফিশিয়াল টাইম জোন নেই

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করে না বলে এই মহাদেশের জন্যে কোন অফিশিয়াল টাইম জোন নেই। অ্যান্টার্কটিকাতে সাধারণত গ্রীষ্মকালের ৬ মাস ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে এবং শীতকালের ৬ মাস ২৪ ঘণ্টাই রাত থাকে। ফলে এই মহাদেশে থাকাকালীন অবস্থায় সঠিক সময় নির্ধারণ করাটাও মুশকিল। তাই এই মহাদেশে গবেষণারত থাকা বিজ্ঞানীরা সচরাচর তাদের নিজ নিজ দেশের সময় অনুসরণ করেন।

৪. একটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট রয়েছে

অবাক করার মত হলেও এটি সত্যি যে পৃথিবীর সবচেয়ে হিমশীতল মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকাতেও রয়েছে একটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু কেন? আসলে অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বাতাসযুক্ত অঞ্চল। এখানে বাতাসের পরিমান এতই বেশি যে এই বাতাস থেকে যেকোনো সময় আগুনের শিখা তৈরি হওয়া সম্ভব। নিম্ন তাপমাত্রার কারণে এই মহাদেশে আগুন নেভানোর মত পর্যাপ্ত তরল পানি খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পরে। তাই জরুরি মুহূর্তে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার ডিপার্টমেন্টটি তৈরি করা হয়েছে।

৫. একটি ATM রয়েছে

শুধু ফায়ার ডিপার্টমেন্ট নয়, অ্যান্টার্কটিকার নিজস্ব একটি ATM-ও রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ব্যাংকিং সংস্থা ওয়েলস ফার্গো অ্যান্টার্কটিকার ম্যাকমুরডো স্টেশনে একটি এটিএম স্থাপন করেছিল। এই এটিএম থেকে শুধুমাত্র আমেরিকান ডলার উত্তোলন করা যায়।

৬. রক্তের জলপ্রপাত

বরফে ঘেরা হিমশীতল জলপ্রপাতের মাঝে গড়িয়ে পড়ছে লাল রক্ত! কেমন হবে দৃশ্যটা? পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার এই অদ্ভুত জলপ্রপাতটি ১৯১১ সালে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন অস্ট্রেলিয়ান ভূতাত্ত্বিক গ্রিফিথ টেইলর। সেসময় তিনি ধারণা করেছিলেন যে লাল শৈবালের কারণে জলপ্রপাতের পানির রঙ লাল হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। প্রকৃতপক্ষে জলপ্রপাতটি দিয়ে কোন রক্ত প্রবাহিত হয় না। এর অতিরিক্ত আয়রন অক্সাইডের উপস্থিতির কারনেই এই জলপ্রপাতের পানির রঙ রক্তের মত লাল দেখায় যার কারনে একে রক্তের জলপ্রপাত বা Blood Falls বলা হয়ে থাকে


৭. অ্যান্টার্কটিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি

১৯৭৮ সালে এমিলিও মার্কোস পামা অ্যান্টার্কটিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। এমিলিও-এর বাবা ছিলেন অ্যান্টার্কটিকার এস্পেরানজা গবেষণা বেসে আর্জেন্টাইন আর্মি ডিটাছমেন্টের প্রধান। অ্যান্টার্কটিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এমিলিও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন। তবে অ্যান্টার্কটিকায় জন্ম হলেও এমিলিও একজন আর্জেন্টাইন নাগরিক।

৮. ৮টি ক্রিশ্চিয়ান গির্জা রয়েছে

পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গমতম জলবায়ুবিশিষ্ট অ্যান্টার্কটিকাতেও রয়েছে ধর্মীয় উপসনালয়। ৮টি ক্রিশ্চিয়ান গির্জা অ্যান্টার্কটিকাতে অবস্থিত। ক্রিশ্চিয়ান গির্জাগুলো অ্যান্টার্কটিকার একমাত্র ধর্মীয় স্থাপনা। অন্য কোন ধর্মের ধর্মীয় স্থাপনা এই মহাদেশে নেই। এই মহাদেশের প্রতিটি গির্জা শুধুমাত্র খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য তৈরি হলেও Chapel of the Snows নামক গির্জাটি বৌদ্ধ ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের অনুষ্ঠানের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

৯. ২টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে

আমাদের এই পৃথিবীতে প্রায় ১৫০০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী অ্যান্টার্কটিকাতে প্রায় ১৩৮টি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে এর মধ্যে কেবল মাত্র ২টি আগ্নেয়গিরি সক্রিয়। অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিটি হল “মাউন্ট ইরেবাস”। অপর সক্রিয়  আগ্নেয়গিরিটি অ্যান্টার্কটিকার Deception Island - এ অবস্থিত।

১০. অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি

১৯৫৯ বিশ্বের মোট ১২টি দেশ অ্যান্টার্কটিকা চুক্তিতে সই করে। এই চুক্তি অনুসারে, এই মহাদেশকে যেকোনো ধরনের সামরিক কর্মকান্ড এবং খনিজ সম্পদ খনন করা নিষিদ্ধ। মহাদেশটিকে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ গবেষণামূলক কাজের জন্যে ব্যবহার করা হবে। চুক্তিতে সই করা ১২টি দেশ হল- আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, ফ্রান্স, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। বর্তমানে পৃথিবীর মোট ৪৮টি দেশ এই চুক্তিতে সম্মতি প্রদান করেছে। 

এই ছিল পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা সম্পর্কে কিছু অজানা ও অবাক করার মত তথ্য। এর মধ্যে কোন তথ্যটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান পৃথিবীর এরকম অদ্ভুত ও অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।